ড. কামালের পাশে সেই মোকাব্বিরই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে জন্ম হলো নতুন নাটকীয়তা। যার শুরু হয় দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খানকে কেন্দ্র করে। শুক্রবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাউন্সিল চলার সময় হঠাৎ তার আগমন। তাকে দেখে ক্ষুব্ধ হন নেতাকর্মীরা। এর পরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ। তাকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে পাশে বসান দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তখন মঞ্চের সামনে থেকে ভর্ৎসনার মিলিত কণ্ঠে ভেসে আসে ‘শেম শেম’ (লজ্জা লজ্জা)। এ সময় দলে ড. কামাল ‘দ্বৈত নীতি’ চালাচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন নেতা দলীয় ব্যাজ ছুড়ে ফেলেন। তাদের ভাষ্য, তিনি সংসদে যেতে গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন, আবার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন। নাটকীয়তায় আরও রঙ ছড়িয়েছে কাউন্সিলে দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর অনুপস্থিতি।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট করে দুটি আসন পায় গণফোরাম। ঐক্যফ্রন্টের বাকি শরিকদের মতো গণফোরামও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দলটি থেকে নির্বাচিত দু’জনই এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়ায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে বহিস্কার করা হলেও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে শাস্তি পেতে হয়নি। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ড. কামালের হস্তক্ষেপে তা আটকে রয়েছে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জানান, মোকাব্বিরকে তারা কেউ কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানাননি। ড. কামাল তাকে দাওয়াত করে থাকতে পারেন।

গণফোরাম সূত্র জানায়, মোকাব্বির খানের উপস্থিতির কারণে কাউন্সিলে আসেননি আট বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মোস্তফা মহসিন মন্টু। এদিকে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাউন্সিলে যেতে পারেননি বলে জানান মন্টু। মোকাব্বিরের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ড. কামালকে জিজ্ঞাসা করুন কেন মোকাব্বির কাউন্সিলে এসেছেন। তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার সংগ্রামের কথা বলা হয়েছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। আমি দুঃখিত ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

কাউন্সিলে গুঞ্জন ছড়ায় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়ছেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসিন মন্টু। এ পদে আসতে পারেন নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, তিনি আর পদে থাকতে চান না।

গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক এরই মধ্যে গণফোরাম ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার অভিযোগ, ড. কামাল দ্বৈতনীতিতে দল চালাচ্ছেন। মন্টুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা সাংবাদিককে বলেছেন, ড. কামাল যে মোকাব্বির খানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা তিনি জানতেন না।

গণফোরামের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, গত ২ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর মোকাব্বির খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নোটিশের চিঠি ড. কামালের হাতে দিলে তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন। প্রকাশ্যে তিনি শপথ না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলেও তার ইন্ধনেই দু’জন শপথ নিয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ১০টায় গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল উদ্বোধন করেন ড. কামাল। কাউন্সিলে সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, জনগণ এদেশের মালিক আর পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণকেই খেয়াল রাখতে হবে, পুলিশ যেন তার ক্ষমতাকে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ না করে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও আইনের শাসন তখনই থাকবে, যখন দেশে আইনের শাসন থাকবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হতাশ হবেন না। এদেশের মানুষ কখনোই স্বৈরাচার মেনে নেয়নি, নেবেও না। স্বাধীনতা ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে।

কাউন্সিলে আরও বক্তব্য দেন মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ড. রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আমিন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর